সাধারণ রোগগুলির প্রতিরোধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা
আয়ুর্বেদ পৃথিবীর প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভিন্ন ধরণের খাদ্যাভ্যাস, জীবন যাপন, বনৌষধির মাধ্যমে স্বাস্থের উন্নতি, রোগের প্রতিরোধ ও রোগের চিকিৎসার বিভিন্ন দিকগুলি জানিয়ে দেয়। এই চিকিৎসা শাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য দুটি –
(২) "আতুরস্য বিকার প্রশমনম” অর্থাৎ রোগীর রোগ শাস্তি। আয়ুর্বেদের সিদ্ধান্ত অনুসারে নিম্নলিখিত খাদ্যাভ্যাস এবং পালনীয় জীবনযাপনের মাধ্যমে
দীর্ঘসময় নীরোগ ও কর্মক্ষম থাকবার উপায় সমূহ –
(১) প্রাতঃকালে শয্যা ত্যাগ (প্রাতরোত্থান)
সূর্যোদয়ের দুঘন্টা আগে ঘুম থেকে ওঠা উচিত। ব্রহ্মমুহূর্ত্ত দিনের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র সময়। রাতের ঘুমের পর শরীর ও মন শান্ত সতেজ ও সক্রিয় থাকে। শান্তমন একাগ্রভাবে নতুন কিছু বিষয় ভাবনা চিন্তা করতে পারে।
নিষেধ : কোন ব্যক্তি যদি অজীর্ণ বা বদহজম এবং কোন রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয় তার ক্ষেত্রে ঐ নিয়ম পালনীয় নয়।
(২) প্রাতঃকালে জলপান (ঊষাপান)
সকালে কিছুক্ষণ হাঁটার পর, হাত ও পা ধুয়ে চার অঞ্জলি পরিমাণ (দু হাতের তালু যোগ করলে যে গভীর স্থান তৈরি হয় তার নাম অঞ্জলি) ঈষৎ গরম জল, মাটির বা তামার পাত্রে রাখা জলও পান করা যেতে পারে।
উপকারিতা : সকালে এই ধরনের নিয়মিত জলপান মল, মূত্র ত্যাগে সাহায্য করে, হজম
ক্ষমতা বাড়ায়, পাচনতন্ত্র বা পরিপাক তন্ত্রে রোগের তীব্রতা কমিয়ে দেয়। রোগ হয় না। তা ছাড়া বার্ধক্যকে দূরে রাখে।
(৩) মল মূত্রাদি ত্যাগ (মল মূত্র বিসর্জন)
প্রতিদিন প্রাতঃকালে মল, মূত্র ত্যাগের অভ্যাস করা উচিত।
উপকারিতা : নিয়মিত মল মূত্র ত্যাগের অভ্যাস স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারণ মল, মূত্র ত্যাগে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ নিষ্কাশিত হয়। মল মূত্রাদির বেগ চেপে রাখলে (বেগ ধারণ) নানান ধরনের রোগের সৃষ্টি কিংবা নানা রোগের। মূল কারণ হতে পারে।
(৪) দাঁত মাজা ও জিভ ছোলা (দন্ত ধাবন)
মল মূত্র ত্যাগের পর দাঁত ও মাড়ির পরিচর্যার জন্য কষায়, কটু, তিক্ত স্বাদযুক্ত কাষ্ঠের দাঁতন বিশেষ উপকারী। যেমন- আকন্দ, নিম, ন্যাগ্রোধ (বট), খদির, করঞ্জ প্রভৃতির ব্যবহার উপকারী। দাঁত মাজার পর তাম্রাদি ধাতু নির্মিত জিভছোলা দিয়ে জিভ পরিষ্কার করা উচিত।
তাছাড়া ত্রিফলার সূক্ষ্ম চূর্ণের সাহায্যে (ত্রিফলা অর্থাৎ হরিতকী, আমলকী ও বহেড়ার সমভাগ চূর্ণ) বা ত্রিকটু চূর্ণ (শুঁঠ, পিপুল ও মরিচের সংমিশ্রণ) ও মধু মিশিয়ে দাঁত মাজা উপকারী।
উপকারিতা : দাঁত ব্রাশ করার ফলে দাঁতের গোড়ায় জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়। জিভ ছোলার ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় ও খাদ্যদ্রব্যের যথাযথ স্বাদ বোঝা যায়। দাঁত মাজা ও জিভ ছোলার পর ঈষৎ গরম জলের মধ্যে ঈষৎ লবণ মিশিয়ে কুরী করলে দাঁত, মাড়ি, মুখগহ্বর ও গলার স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।
(৫) নাসারন্ধ্রে ঔষধ প্রয়োগ (নস্য কর্ম)
প্রতিদিন সকালে নাসাছিদ্র দিয়ে ৩-৫ ফোঁটা তিলতৈল/ঘি/কিংবা কোন ঔষধযুক্ত তেল যেমন অনু তেল নিয়মিত ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
উপকারিতা : নিয়মিত নস্যকর্মে চোখ, কান, নাক, মস্তক/শিরঃ ও কাঁধের স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। নস্যকর্ম মুখমণ্ডলের ত্বককে সতেজ রাখে। অকালে টাক পড়ে না এবং চুল পেকে যায় না। মাথায় যন্ত্রণা, প্যারালাইসিস, সাইনুসাইটিস, স্পন্ডিলাইসিস, মনের রোগ প্রভৃতি সহজে আক্রমণ করতে পারে না। দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, দাঁত ও মাড়ির ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরের উত্তমাঙ্গে (মস্তকে) বার্ধক্য উপস্থিত হতে দেয় না।
নস্য কর্ম নিষেধ : শরীরে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হলে (রক্ত দুষ্টি), অজীর্ণ বা বদহজমে, শ্বসনতন্ত্রের রোগ ও সন্তান প্রসবের পর নস্য-কর্ম নিষেধ ।
(৬) তৈল গণ্ডুষ ধারণ (গণ্ডুষ)
ঈষৎ উষ্ণ জলের সঙ্গে বা ঠাণ্ডা জলের মধ্যে তিল তেল/ গাওয়া ঘি/দুধ/মধু মুখের মধ্যে ধারণ করতে হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত চোখ বা নাক দিয়ে জল না আসে। তাছাড়া উপরিউল্লিখিত দ্রব্যগুলির সাহায্যে নিয়মিত গার্গল বা কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়।
উপকারিতা : মুখের মধ্যে তেল তা অন্যান্য দ্রব্য ধারণ করলে চোখ, কান, নাক ও জিহ্বা নিজের নিজের কাজ করে। মুখমণ্ডলে বার্ধক্যের ছাপ দূর হয়, অকালে চুল পাকে না, মুখের চামড়ায় কালো ছোপ পড়তে দেয় না, ঠোঁট ফাটার ভয় থাকে না, অতিরিক্ত লালাস্রাব কমায়, মুখ শুকিয়ে যায় না, দাঁতের গোড়া শক্ত করে, মুখের রোগ প্রতিরোধ করতে, খাওয়ার রুচি জন্মাতে সাহায্য করে। গলার ব্যাথা দূর করে। ঠোটের রুক্ষভাব কমায়।
(৭) তেল মালিশ (অভ্যঙ্গ)
সারা শরীরে তেল মাখা উচিত। বিশেষ করে মাথায়, কানে এবং দুপায়ে যত্ন সহকারে তিল তেল/সরিষার তেল/নারিকেল তেল মাথা উচিত। আবার মালিশের জন্য বিভিন্ন ঔষধযুক্ত তেল (যেমন মহানারায়ণ, মহাচন্দনাদি তেল) ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকারিতা : নিয়মিত তেল মালিশে চামড়া দৃঢ় হয় এবং সৌন্দর্য বাড়ায়। শরীর সহজে কষ্ট ও পরিশ্রম সহ্য করতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিপুষ্ট হয়। বিশেষ করে পেশীর পুষ্টি হয়। শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। মাথার চুল কাল হয়, ঘুম ভাল হয়, দেখবার ও শোনাবার ক্ষমতা বাড়ে।
রাতে শোয়ার আগে তেল মালিশ বিশেষ করে দু-পারে তেল মালিশ দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়, ক্লান্তি/ শ্রম বোধ কমায়, পায়ের টানভাব বা সংকোচন কমিয়ে দেয়।
(৮) শরীর চর্চা (ব্যায়াম)
নিয়মিত / রোজ শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা উচিত। বিশেষ করে বসন্ত ও শীতকালে শরীর ও মনকে স্থির রাখার জন্য ব্যায়াম প্রয়োজন। যতক্ষণ পর্যন্ত কপালে বা বগলে/কক্ষে ঘামের সৃষ্টি না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যায়াম করা উচিত।
উপকারিতা : ব্যায়াম শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ফুসফুসকে সতেজ ও সক্রিয় করে। শরীর দৃঢ় হয়। সহসা কোন রোগ আক্রমণ করতে পারে না। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটলে স্মৃতিশক্তি, হজমক্ষমতা বাড়ে। চোখ, নাক, কান প্রভৃতি সঠিক কাজ করে ও ইন্দ্রিয়সমূহ প্রসন্ন থাকে।
নিষেধ: কাশির সঙ্গে রক্ত, যক্ষ্মা এবং জটিল হার্টের অসুখে ব্যায়াম নিবিদ্ধ।
(৯) চুল, নখ ও শ্মশ্রু যথা সময়ে কর্তন (ক্ষৌরকর্ম)
প্রতি পাঁচদিন অন্তর কেশ, নখ ও দাড়ি কাটা আবশ্যক।
উপকারিতা : ক্ষৌরকর্ম শরীরকে হালকা ও মনকে প্রফুল্ল করে।
(১০) চূর্ণ ঔষধের সাহায্যে ম্যাসাজ (উদবর্তন)
ব্যায়ামের পর লোমকূপের প্রতিলোম কোন চূর্ণ ঔষধের সাহায্যে উদবর্তন করা উচিত। চূর্ণ ঔষধ যেমন- হরিদ্রা চূর্ণ, ত্রিফলা চূর্ণ, আমলকী চূর্ণ।
উপকারিতা : তেল মালিশের পর উর্দ্ধতন চর্বি কমিয়ে দেয়, শরীরকে দৃঢ় ও বলবান করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, চুলকানি ও ব্লকের বিভিন্ন পীড়া রোধ করে।
(১১) স্নান
উদবর্তনের পর স্নান করা আবশ্যক। খুব গরম বা খুব ঠাণ্ডা জলে স্নান করা উচিত নয়।
উপকারিতা : স্নান ধূলো, ময়লা, ঘাম, চুলকানি, পিপাসা, গায়ে জ্বালাভার এবং শ্রম নাশ করে থাকে। তাছাড়া স্নান ক্ষুধাবর্দ্ধক, আয়ু, সাহস ও বল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
নিষেধ : জ্বর, অর্ণিত রোগ বা মুখ একদিকে বেঁকে যাওয়া, প্যারালিসিস, চোখের অসুখ, মুখ ও কানে ব্যাথা, বদহজম, সাইনুসাইটিস, ডাইরিয়া, কোন খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার পর স্নান নিষিদ্ধ ।
(১২) মেডিটেশান (ধ্যান)
মনকে দীর্ঘ সময় শরীরের একটি স্থানে স্থির রাখাকে ধ্যান বলে। কয়েক মিনিট থেকে এক ঘন্টা বা ততোধিক সময় শান্তমনে বসতে হয়। এই অবস্থায় নিজ নিজ ইষ্টনাম বা ওঁকার মন্ত্র মনে মনে জপ করা যেতে পারে। মেডিটেশান বা ধ্যান দিনচর্যার একটি অঙ্গ। আবার আত্ম উপলব্ধিতেও সাহায্য করে।
উপকারিতা : মনকে স্থির রাখতে, শরীরকে সুস্থ রাখতে, চিন্তা শক্তির ক্ষমতা, সাহস ও বল বৃদ্ধিতে ও দীর্ঘায়ু হতে ধ্যানের শক্তি অপরিসীম।
(১৩) ভোজনের নিয়ম সমূহ (আহার বিধিবিধান) :
আহার গ্রহণ দেশ বা ভৌগোলিক অঞ্চল, কাল (আহার গ্রহণের সময় ও ঋতু) এবং অভ্যাস প্রভৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
• আহার সুষম বা ব্যালান্স হওয়া উচিত। খাদ্য তালিকায় ছয় রস যুক্ত বা ছয় ধরনের স্বাদযুক্ত আহার দ্রব্য থাকা প্রয়োজন যথা মধুর, অম্ল, লবণ, তিক্ত, কটু ও কষায়। - আহার যেন পুষ্টিকর হয় ও পরিপাক শক্তির ব্যাঘাত না ঘটায়। খুব গরম বা খুব ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া উচিত নয়, এই ধরনের খাবার সহজে হজম হয় না।
• স্বাস্থ্য সম্মত স্থানে, শান্ত মন ও পরিবেশে উপযুক্ত পাত্রে ভোজন করা উচিত।
• শক্ত বা কঠিন খাদ্যকে চিবিয়ে খাওয়া উচিত।
• খুব তাড়াতাড়ি বা খুব আস্তে আস্তে খাবার খাওয়া উচিত নয়। দ্রুত আহার করলে ভুক্তদ্রব্য সহজে পরিপাক হয় না। ভোজনের সময় কথা বলা, হাসতে থাকা এবং টেলিভিশন ইত্যাদি দেখা উচিত নয়।
• পূর্বের খাদ্য সম্পূর্ণভাবে জীর্ণ/ পরিপাক হওয়ার পর পরবর্তী খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করা উচিত।
• ভোজনের শুরুতে মধুর রসযুক্ত খাদ্য যেমন সুমিষ্ট ফল ও অম্ল রসযুক্ত খাদ্যদ্রব্য যেমন পাতিলেবুর রস, ভোজনের মধ্যে লবণরস এবং শেষে কটু (ঝাল), তিক্ত, কষায় রস যুক্ত খাদ্য খাওয়া উচিত। রাত্রিতে দুই নিষিদ্ধ।
• ভোজন চলাকালীন জলপান অনুচিত। ভোজন শুরু করার কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে জলপান করা যেতে পারে। ভোজন শেষ হওয়া মাত্র জলপান নিষেধ। যদি খুব প্রয়োজন হয় তাহলে অল্প পরিমাণে জল পান করা যেতে পারে।
• ভুক্ত খাদ্যদ্রব্যকে তাড়াতাড়ি হজম বা জীর্ণ করা এবং পৌষ্টিক তন্ত্রের যথাযথ শোষণের জন্য ভোজনের প্রথমে অল্প পরিমাণে স্নেহ দ্রব্য খাওয়া উচিত।
• রাতের খাবার, দিনের খাবারের চেয়ে হালকা বা লঘুতর হওয়া প্রয়োজন। ঘুমোতে যাওয়ার ৩ ঘন্টা আগে রাতের খাবার খেতে হয়। নৈশ ভোজনের পর ১০০ পা চলা এবং ১০-১৫ মিনিট বামদিক হয়ে শয়ন করা দরকার।
• সংযোগ বিরুদ্ধ আহার নিষেধ। যেমন দুগ্ধ ও মৎস, রান্না করা খাবারের সঙ্গে কাঁচা খাদ্যদ্রব্য, লবণ ও দুধ, সমান মাত্রায় মধু ও ঘি, ফলাহারের পর জল পান, ফলের সঙ্গে
• শর্করা জাতীয় খাদ্য যেমন আলু। • ভোজনের পর ভারী/কষ্টকর মানসিক বা শারীরিক শ্রম অনুচিত। উপযুক্ত ভাবে ভুক্তখাদ্যের পরিপাক বা হজমের জন্য অল্প বিশ্রামের প্রয়োজন।
(১৪) ঘুম (নিদ্রা)
রাত্রিতে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। আবার শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বেশী সময় ঘুমের দরকার।
• দিনের বেলায় ঘুমানো নিষেধ বিশেষ করে বসন্ত ঋতুতে দিবা নিদ্রা নিষেধ। বেশী রাত্রি করে ঘুমানো অনুচিত। রাত্রি জাগরণে নিবা নিদ্রা / দিনে ঘুমানো দরকার কারণ রাত্রি জাগরণ রুক্ষ এবং দিবানিদ্রা স্নিগ্ধ।
• গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ ঋতুতে দিনে ঘুমানো নিষেধ নয়। কিন্তু শীত ঋতুতে দিনের বেলা ঘুমানো বিভিন্ন ধরনের শ্বসন তন্ত্রের ও পরিপাক তন্ত্রের রোগের কারণ হয়।
• রাত্রিতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথায়, হাতের ও পায়ের তালুতে তেল মালিশ উপকারী। উপকারিতা :- প্রতিদিন শারীরিক শ্রম ও মানসিক চাপের ফলে শরীরের কলা-কোষের যে ক্ষয় ক্ষতি হয় সুনিদ্রা/ঘুম তা পূরণ করে দেয়।
(১৫) অনুচিত ও উচিত বৃত্ত বর্ণনা (সদবৃত্ত)
সুখের জন্য প্রত্যেকেই কঠোর শ্রম করে। সুখী হাতে হলে প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিভাব ও হিতৈষীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ভাব রেখে নীচের শত্রুদের এড়িয়ে চলতে হয়।
• সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রতি ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও বাচিক পাপ যেমন চুরি করা, মিথ্যা বলা, ঈর্ষা, অহমিকা, পরের অনিষ্ট চিন্তা প্রভৃতি থেকে বিরত থাকা উচিত। • যারা বুদ্ধি ও বিদ্যায় পারদর্শী এবং বৃদ্ধ তাদের সম্মান করা।
• অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা অনুচিত।
• পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ ত্রিবর্গের অর্থাৎ ধর্ম, অর্থ ও কামের সাফল্য আনে।
• কোন বস্তুর প্রতি আসক্ত হওয়া এবং মদ্যপান, ধূমপানে অভ্যস্ত হওয়া উচিত নয় ।
• সব সময় সত্য বলা এবং ভদ্র/শিষ্টাচার সম্পন্ন শ্রদ্ধাসূচক ব্যবহার করা উচিত।
• নিজ দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন থাকা অর্থাৎ আমি যে সমস্ত কাজ করে চলেছি তার ফল ভাল না মন্দ বিচার করা বা আত্ম সমীক্ষা/আত্মবিশ্লেষণ দরকার।
• নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা উচিত।
• অসৎ সঙ্গ পরিহার করা উচিত।
• মানুষ ভুল করলে তাকে ক্ষমা করে সেই ভুলের সংশোধন।
• স্বাস্থ্য রক্ষার দিকে নজর দিতে হবে।
কয়েকটি সাধারণ রোগ, লক্ষণ ও তাদের ঘরোয়া চিকিৎসা :-
১. জ্বর (Fever)
• এক চামচ তুলসী পাতার রস ও এক চামচ আদার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে হবে সারাদিনে চার বার।
২. সাধারণ সর্দি (Common Cold)
• আদা (শুঁঠ), মরিচ ও তুলসী পাতা দিয়ে তৈরি ওষধি চা।
• এক চামচ মধু ও আধ চামচ দারুচিনির ত্বক মিশ্রণ সারাদিনে ২-৩ বার।
• পাঁচ থেকে ছয়টি রসুনের কোয়াকে থেতো করে খাওয়া।
• যোয়ানকে (বীজ) কাপড়ের মধ্যে রেখে পুঁটলি করে বারে বারে তার ঘ্রাণ নিলে বন্ধ নাক খুলে যায়।
কাশি (Cough)
• টাটকা আদাকে টুকরো টুকরো করে পরিমাণ মত জলে ফুটিয়ে, সেই ঈষৎ উষ্ণ জল বারে বারে খেলে কাশি কম হয় ।
• এক চামচ আদার রস ও এক চামচ তুলসী পাতার রসের সঙ্গে তিন চামচ মধু মিশিয়ে
রেখে দিতে হয়। এই সংমিশ্রণ সারাদিনে ৩ বার এক চামচ করে খেলে কাশির তীব্রতা কমে।
৪. কোষ্ঠবন্ধতা (Constipation)
• এক গ্লাস ঈষৎ উষ্ণ জলে ১ চামচ লেবুর রস এবং একটু লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়া উপকারী।
• এক গ্লাস ঈষৎ উষ্ণ জলে আধ চামচ মৌরি (শুলফা) চূর্ণ মিশিয়ে রাতে শোয়ার আগে খাওয়া উপকারী।
পাতলা পায়খানা (Diarrhoea)
• আধ চামচ আদা বাটার সঙ্গে এক চিমটে মরিচ গুঁড়ো ও দু-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে দিনে দুবার সেবন করতে হবে।
ব্যাথা (Pain)
• ৬০ মিলি নারিকেল তেলের সঙ্গে ৮-১০টি রসুনের কোয়া ভাজতে হয়। সেই ঈষৎ উষ্ণ তেল ব্যথার জায়গায় প্রয়োগে ব্যথা কমে।
• এক কাপ সরিষার তেল ও ১০ গ্রাম কর্পূর মিশিয়ে, যতক্ষণ পর্যন্ত কর্পূর গলে না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত গরম করতে হবে। এই ঈষৎ উষ্ণ তেল ব্যাধিত স্থানে উপকারী।
• এক গ্লাস গরম দুধে এক চামচ হরিদ্রাচূর্ণ (হলুদ) মিশিয়ে খেলে ব্যথা কমে।
৭. মধুমেহ (Diabetes Mellitus)
• প্রতিদিন খালিপেটে ৩-৫ টি টাটকা করলার রস খেতে হবে।
• চার চামচ মেথীর বীজ ২৫০ মিলি জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে, সকালে ঐ মিশ্রণকে ছেঁকে নিয়ে প্রতিদিন খেতে হয়।
• এক থেকে তিন গ্রাম হরিদ্রাচূর্ণ ঈষৎ উষ্ণ গরম জলের সঙ্গে দিনে ২ বার খেতে হবে।
• ৩-৪ চামচ দারুচিনিচূর্ণ ২ লিটার জলের মধ্যে দিয়ে ২০ মিনিট ফোটাতে হবে। ঐ জল ঠাণ্ডা করে প্রতিদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
• ত্রিফলাচূর্ণ (হরিতকী, বিভীতক বা বহেরা ও আমলকী) ১-৩ গ্রাম মাত্রায় সারাদিনে ২ বার ঈষৎ উষ্ণ গরম জলের সঙ্গে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure)
• প্রতিদিন ২-৩টি সতেজ রসুনের কোয়া চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
দাবিত্যাগ : উপরে উল্লেখিত কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে কোনো রকম সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনার সাস্থ, আপনার সম্পদ। যদি আপনার সাস্থ সমস্যা গুরুতর হয় তাহলে অবিলম্বে আপনার নিজ্বস্য ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। আমি একজন ভারত সরকারি সাস্থ দপ্তরের সাস্থ কমর্চারী হিসাবে মানুষ কে সাহায্য করার উদ্দেশে বিষয়টি আলোচনা করেছি (আমার ট্রেনিং এর অভিজ্ঞতা থেকে) আপনি কোনো প্রশ্ন করতে চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এখানে ক্লিক করে : Contact us